ecommerce website commom mistakes

বাংলাদেশের ই কমার্স ওয়েবসাইটের দশটি ভুল

ডিজিটাল বিশ্বে মানুষ নানা কাজের জন্য ক্রমশ অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ছে। আর এই অনলাইন নির্ভর বিশ্বে ই কমার্স ব্যবসার কার্যকারিতার কথা বলাই বাহুল্য। তাই আজকের যুগে ই কমার্সের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। তবে, ই কমার্স ব্যবসা শুরু করতে যে ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হয় সেটি তৈরি করার সময় আমরা অনেকেই সাধারণত অনেক ভুল করে থাকি।

আমি মো ফারুক খান, দীর্ঘদিন ধরে ওয়েবসাইট সম্পর্কিত কাজ করছি। আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের ওয়েবসাইট তৈরির সময় সাধারণত যে দশটি ভুল আমরা সচরাচর করে থাকি সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আমি ই কমার্সের গুরুত্ব এবং ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির সময় করা প্রতিটি ভুল এখানে পয়েন্ট আকারে ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করার চেষ্টা করবো, যাতে আপনারা সহজে বুঝতে পারেন।

চলুন তাহলে শুরু করি।

ই কমার্সের গুরুত্ব

অনলাইনে ব্যবসার ক্ষেত্রে ই কমার্সের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। দেশেই অনেকে এফ কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে ই কমার্স সাইট তৈরি করছেন। কেননা, নিজস্ব ব্যবসাকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে গেলে ই কমার্স ছাড়া তা সম্ভবই নয়। ই কমার্স ব্যবসা করা তুলনামূলক সহজ এবং নিরাপদ। এফ কমার্সের তুলনায় ই কমার্স যে কতোটা কার্যকরী তা আমি ই কমার্স এবং এফ কমার্স এর পার্থক্য বোঝানোর সময় আলোচনা করেছি। এই আর্টিকেল পড়লে ব্যবসার ক্ষেত্রে ই কমার্সের গুরুত্ব আপনি আরো ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।

ই কমার্স ওয়েবসাইটের দশটি ভুল

ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির সময় যে দশটি ভুল আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করে থাকি সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

০১. ইউজার ফ্রেন্ডলি ডিজাইন

ওয়েবসাইট তৈরির সময় যে ভুলটা আমরা সবচেয়ে বেশি করে থাকি, তা হলো ওয়েবসাইটের ডিজাইন যে ইউজার ফ্রেন্ডলি হতে হবে, তা গুরুত্ব না দেয়া। ওয়েবসাইট বানানোর সময় সাইটের ডিজাইনের দিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, বাংলাদেশের অনেক ওয়েবসাইট ইউজার ফ্রেন্ডলি নয়, কেননা এসব ওয়েবসাইট আর কোনো ওয়েবসাইট দেখেই বানানো হয়েছে। কিন্তু, এটা ঠিক নয়। ই কমার্স সাইট তৈরির আগে আমাদের অবশ্যই এই ব্যবসার UI (User Interface), UX (User Experience) করে নেয়া উচিত। এতে আমরা ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন করতে পারবো এবং গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবো। তাই, আগে ইউজার ফ্রেন্ডলি ডিজাইন তৈরি করে তারপর ডেভেলপার কে দিয়ে সাইট ডেভেলপ করা উচিত। যেমন, বাংলাদেশে অনেকক্ষেত্রে বাড়ি বানাতে গেলেও দেখা যায়, রাজমিস্ত্রিই আর্কিটেক্ট, সেই ডেভেলপার, সেই সবকিছু। অথচ নিয়ম হচ্ছে, বাড়ি বানানোর সময় আর্কিটেক্ট এর সাহায্য নিয়ে আগে বাড়ির ডিজাইন করা, এরপর রাজমিস্ত্রি এসে সেই ডিজাইনটা ডেভেলপ করে বাড়ি বানাবে। একইভাবে, ই কমার্স ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও আগে একজন UI এক্সপার্ট এসে ওয়েবসাইটের ডিজাইন তৈরি করবে, এরপর একজন ডেভেলপার সেই ডিজাইন ডেভেলপ করে ওয়েবসাইট তৈরি করবে। তবে, যেহেতু ওয়েবসাইটের ইউজার ইণ্টারফেস বা UI ডিজাইন করার সময় এসইও এর বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয়, তাই যেই ডিজাইনার সাইট ডিজাইন করবে, তার একজন এসইও এক্সপার্ট এর সাথে কথা বলে নিলে বা একজন এসইও এক্সপার্ট কে পাশে রেখে সাইট ডিজাইন করলে ভালো হয়। এতে, আপনি একটি ইউজার ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট পেতে পারেন।

০২. ক্যাটাগরি নির্বাচন

ই কমার্স ওয়েবসাইটে আর একটি সাধারণ ভুল যা সচরাচর চোখে পড়ে, তা হলো ক্যাটাগরি নির্বাচন। অনেক ওয়েবসাইটেই দেখা যায়, ঠিকমতো ক্যাটাগরি নির্বাচন না করে যেমন খুশি তেমন ক্যাটাগরি দেয়া থাকে, যা একদম ঠিক না। কেননা, এই ক্যাটাগরি পেইজ ওয়েবসাইটের হোম পেইজ হিসেবে কাজ করে এবং এখানেই সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক আসে। তাই ই কমার্সে এই ক্যাটাগরি পেইজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং পণ্যের সাথে মিলিয়ে ক্যাটাগরি নির্বাচনের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে করতে হবে। যেমন, আমি যদি এখন মোবাইল বিক্রি করতে যাই, তাহলে এখানে অবশ্যই মোবাইলের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে, এক্ষেত্রে মোবাইলের ব্র্যান্ড, প্রাইস রেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়ের উপর ক্যাটাগরি হতে পারে। আপনি যদি সুন্দরভাবে সঠিক ক্যাটাগরি নির্বাচন করে পেইজটি সাজান তাহলে ই কমার্সে ভালো ফলাফল পেতে পারেন, ভুল ক্যাটাগরি নির্বাচন করলে ওয়েবসাইটে ঠিকমতো ট্রাফিকও আসবে না, সাইটের র‍্যাঙ্কিংও ভালো হবে না।

০৩. ক্যাটাগরি পেইজ ডিজাইন

আগেই বলেছি, ক্যাটাগরি পেইজ আপনার ওয়েবসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেইজ যা আপনার সাইটে সর্বাধিক ট্রাফিক আনতে সহায়তা করবে। তাই আপনার এই পেইজটাকে যথাসম্ভব গুছিয়ে তৈরি করতে হবে। এর জন্য সঠিক টাইটেল থাকতে হবে, পণ্যের ছবিগুলো সাজানো থাকবে, ঠিকঠাক ফিল্টার সিস্টেম থাকবে। এই ফিল্টার সিস্টেম কিন্তু এক এক পণ্যের জন্য এক একরকম হবে। যেমন, আপনি যদি এসির জন্য ফিল্টার দিতে যান, তবে এসির ব্র্যান্ড, এসি কত টন, এসির প্রাইস রেঞ্জের উপর ফিল্টার হতে পারে। আবার ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কিন্তু আপনি চাইলে দাম ছাড়াও প্রসেসরের উপর ফিল্টার করতে পারেন। অর্থাৎ প্রোডাক্টের সাথে মিলিয়ে ফিল্টারিং সিস্টেম থাকতে হবে। ক্যাটাগরি পেইজের এই ফিল্টারিং সিস্টেম কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা গুছানো ক্যাটাগরি পেইজে একটা ভালো ফিল্টারিং সিস্টেম থাকতেই হবে। শুধু তাই না, এই ক্যাটাগরি পেইজটা কী নিয়ে সে সম্পর্কে আপনি যদি ১০০/২০০ শব্দের একটি বিবরণ পেইজে রাখতে পারেন তাহলে ভালো। এই বিবরণ পেইজটা সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা নিতে গুগলকে সাহায্য করে। এতে ই কমার্স ব্যবসাতে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।

০৪. কীওয়ার্ড নির্বাচন

আপনার ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত কীওয়ার্ড নিবার্চন করা ই কমার্সের আর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যা অনেকেই করেন না। অনেক ই কমার্স সাইট, নিজেদের সাইটের জন্য ঠিকমতো কীওয়ার্ড রিসার্চ-ই করেন না। শুধুমাত্র সাইট বানিয়েই রেখে দেন। যেটা মোটেই ঠিক না। ই কমার্সের ক্ষেত্রে আপনার পছন্দ করা ক্যাটাগরি পেইজ এবং আপনার পণ্যের উপর নির্ভর করে উপযুক্ত কীওয়ার্ডগুলো আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। যেমন, এখন আমি যদি এসি বিক্রি করার জন্য ওয়েবসাইট বানাই, সেক্ষেত্রে একটা ভালো কীওয়ার্ড হতে পারে, ‘এসি প্রাইস ইন বিডি বা বাংলাদেশ’, দেখা যাবে এই কীওয়ার্ড দিয়ে মাসে হয়তো ২০ হাজার লোক গুগলে সার্চ করছে। এখন আমি যদি এই কীওয়ার্ড এর বিষয়ে না জেনে বা মানুষ এসি নিয়ে কী লিখে গুগলে সার্চ করছে তা না জেনেই আমার ওয়েবসাইটে এসি বিক্রি শুরু করি তাহলে আমি আমার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক সেভাবে পাবো না। এজন্য উপযুক্ত টার্গেটেড কীওয়ার্ড, অর্থাৎ কমার্শিয়াল কীওয়ার্ডগুলো আমার বেছে নিতে হবে এবং ওয়েবসাইটে সঠিকভাবে বিন্যাস করতে হবে। এই বিন্যাসের কাজটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

০৫. পণ্যের ছবি এবং মাল্টিমিডিয়া

পণ্যের ছবি বা এ সম্পর্কিত কোনো ভিডিও অর্থাৎ পণ্যের ভিজ্যুয়াল ই কমার্সের একটি মূল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যখন কোনো দোকানে যায়, সেখানে আমরা পণ্য ধরে দেখতে পারি বা পণ্য সম্পর্কে বিক্রেতার সাথে দশটা কথা বলতে পারি। কিন্তু ই কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে যেহেতু সে সুযোগ নেই, তাই ওয়েবসাইটে পণ্যের ছবি এমন হতে হবে, যেনো ছবিই কথা বলছে। পণ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এখানে একটা ছোট ভিডিও থাকতে পারে। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে গুগল থেকে যেমন-তেমন একটা ছবি নিয়ে সাইটে দিয়ে দেয়া একেবারেই ঠিক নয়। আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইটে দেয়া, ভালো ছবিও কিন্তু র‍্যাঙ্ক করে। যেমন, আপনি যদি ই কমার্সে টিভি বিক্রি করেন, অনেকে যখন টিভি কেনার আগে গুগলে টিভি লিখে সার্চ করবে তখন আপনার ওয়েবসাইটে দেয়া, টিভির ভালো একটা ছবিও র‍্যাঙ্ক করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এরকম ছবি আপনার ওয়েবসাইটে ভালো ট্রাফিক নিয়ে আসতে সাহায্য করবে। পণ্য বা প্রোডাক্টের ভালো ছবি অর্গানিক ট্রাফিকের বেশ কার্যকরী একটি সোর্স। তাই আমাদের অবশ্যই পণ্যের ছবিগুলোকে ঠিকঠাকভাবে অপ্টিমাইজ করে গুছিয়ে তৈরি করে নিয়ে, তারপর ওয়েবসাইটে দেয়া উচিত। পণ্যের ভালো ছবির উদাহরণ দেখতে চাইলে, আপনি হাতিলের ওয়েবসাইটে ঘুরে আসতে পারেন। এই ওয়েবসাইটে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন, তারা কত সুন্দরভাবে তাদের পণ্যগুলোর ছবি ভালোমতো সাজিয়ে গুছিয়ে সাইটে উপস্থাপন করেছে। এটি তাদের ওয়েবসাইটে একটি অনন্য ফিচার যুক্ত করেছে, যা ই কমার্সের জন্য খুবই সুবিধাজনক।

০৬. কল টু অ্যাকশন

ই কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে কল টু অ্যাকশন একটি অতি দরকারি বিষয়। ধরেন, কোনো ওয়েবসাইট থেকে কোনো পণ্য আমার পছন্দ হয়েছে, সেটা কিনবো আমি। কিন্তু দেখা গেলো, ওয়েবসাইটে অ্যাড টু কার্ট এবং বাই নাও দুইটা বাটনই দেয়া হয়েছে। তখন অবশ্যই আমি দ্বিধায় পরে যেতে পারি। এজন্য আপনার প্রোডাক্ট অনুযায়ি বুঝে-শুনে কল টু অ্যাকশন বাটন ওয়েবসাইটে প্লেস করা উচিত। যেমন, আপনি চালডাল এর মতো ই কমার্স গ্রোসারি থেকে একসাথে কয়েকটা পণ্য কিনবেন, এক্ষেত্রে অ্যাড টু কার্ট করে করে আপনি কার্টে পণ্যগুলো অ্যাড করে তারপর অর্ডার করবেন। কিন্তু যদি আপনি একটা টিভি, ল্যাপটপ বা আসবাবের মতো বড় এবং অপেক্ষাকৃত দামি পণ্য ই কমার্সে বিক্রি করতে যান, তাহলে এসব পণ্য একসাথে একটার বেশি কেউ অর্ডার করার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। সেক্ষেত্রে গ্রাহককে অ্যাড টু কার্ট দেয়াটা আসলে তেমন যৌক্তিক বলে মনে হয় না। তার চেয়ে সহজভাবে যদি সরাসরি বাই নাও বাটন দেয়া থাকে সেটা অনেক বেশি ভালো হবে বলেই আমার মনে হয়। আমাদের দেশের দশটা ই কমার্সের মধ্যে সাতটা ই কমার্সের ক্ষেত্রেই দেখা যায় গ্রাহক একটা পণ্য কিনতে গেলে, এই বাই নাও এবং অ্যাড টু কার্টের মধ্যেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পরে যায়। শুধু তাই না, এখানে কী প্রক্রিয়ায় প্রোডাক্ট কিনতে হবে তা অনেক গ্রাহক বুঝতে পারেন না। কল টু অ্যাকশন বাটনের একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে, স্টারটেক এর ওয়েবসাইটটি, এখানে আপনি পণ্য পছন্দ করে সরাসরি বাই নাও বাটনের সাহায্যে অর্ডার করে দিতে পারবেন। আবার এর একটি খারাপ উদাহরণ হতে পারে, ওয়ালটনের ওয়েবসাইটটি। এখানে আপনি একটা পণ্য কিনতে গেলে তা পছন্দ করার পর আপনাকে অনেকগুলো স্টেপ পার করে অর্ডার প্লেস করতে হবে। যেটা অনেকের জন্য বেশ জটিল। তাই ওয়েবসাইট অনুযায়ি গ্রাহকের আচরণ বুঝে সহজ কল টু অ্যাকশন বাটন দেয়া উচিত।

০৭. প্রোডাক্ট আপডেট

আমাদের দেশে অনেক ই কমার্স সাইটে প্রোডাক্টের বিষয়ে আপডেট করা থাকে না। এটা ই কমার্সের ক্ষেত্রে খুবই খারাপ একটা বিষয়। আপনার পণ্য স্টকে থাকছে কিনা বা স্টক আউট হচ্ছে কিনা, এই বিষয়গুলো সবসময় ওয়েবসাইটে আপডেটেড থাকা উচিত। অর্থাৎ, আপনার প্রোডাক্ট যখন স্টকে থাকবে, তখন সেটা যেমন ওয়েবসাইটে দেখাবে, আবার সেই প্রোডাক্ট স্টক আউট হয়ে গেলে সেই তথ্যও সাইটে থাকতে হবে। ধরেন, আপনার কোনো পণ্য আর দুই পিস আছে, সেই সময় যদি টার্গেটেড গ্রাহককে একটা নোটিফিকেশন দেয়া যায়, তখন গ্রাহকের সেই পণ্য কেনার আগ্রহ অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। যেমন, আপনারা যদি আমাজনের ওয়েবসাইটটি খেয়াল করেন, তাহলে সেখানে পণ্যের ছবির নিচে একটা জায়গায় দেখবেন, সেই পণ্য স্টকে কত পিস আছে, এসব তথ্য দেয়া আছে। ই কমার্সে প্রোডাক্ট আপডেট রাখাটা বেশ জরুরি। দাম, স্টক থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য সঠিকভাবে নিয়মিত ওয়েবসাইটে আপডেটেড রাখতে হবে।

০৮. সার্চ নেভিগেশন

প্রতিটা ই কমার্স সাইটেই পণ্য সার্চ করার জন্য উপরে একটা সার্চ অপশন আমরা দেখে থাকি। বাংলাদেশের অনেক ই কমার্স সাইটে দেখা যায়, এই সার্চ অপশনটা ঠিকমতো কাজই করে না, এটা অবশ্যই ঠিক করতে হবে। গ্রাহক বা ইউজার কে আপনি যতো সহজে পণ্যের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন ততো সহজে গ্রাহক আপনার ওয়েবসাইট অ্যাকসেস করবে এবং আরো বেশি পণ্য কেনার জন্য আগ্রহী হবেন। তাই আপনার ওয়েবসাইটে একটি ভালো ইউজার ফ্রেন্ডলি সার্চ অপশন রাখা উচিত। আর একেক ধরনের ই কমার্স ব্যবসার জন্য একেক রকম সার্চ অপশন ভালো কাজ করে। যেমন ধরেন, দারাজের মতো বড় ই কমার্স সাইটগুলোতে প্রচুর পণ্য বিক্রি হয়। এসব সাইট থেকে আমি একটা ঘড়ি কিনতে চাইলে, ঘড়ির জন্য যদি সার্চ করি, দারাজ আমাকে ঘড়ির একটা সিঙ্গেল ছবি কিন্তু দেখাবে না, তারা আমাজনের মত আমাকে ক্যাটাগরি সাজেস্ট করবে। এধরনের সার্চ নেভিগেশন সিস্টেম এরকম বড় ধরনের সাইটের জন্য ভালো। আবার, রকমারির মতো ই কমার্স সাইটে যদি আপনি একটি নির্দিষ্ট বইয়ের নাম দিয়ে সার্চ করেন, তারা আপনাকে সেই বইটিই দেখানোর চেষ্টা করে। অর্থাৎ, কোনধরনের ওয়েবসাইটের জন্য কেমন সার্চ নেভিগেশন কাজ করবে সেটা ওয়েবসাইটের বিক্রি করা পণ্যের উপর নির্ভর করে। এই সার্চ নেভিগেশন কিন্তু ই কমার্সের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার সাইটের ইউজারদের জন্য কোনধরনের সার্চ সিস্টেম কাজ করবে সেটা বুঝে সঠিক সার্চ নেভিগেশন ওয়েবসাইটে রাখা উচিত।

০৯. কাস্টমার রিভিউ

ই কমার্স ব্যবসাতে আর একটি বেশ প্রয়োজনীয় বিষয় হলো কাস্টমার রিভিউ। একজন কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কিনলে তার দেয়া তথ্যগুলো আপনার কাছে যেহেতু থাকবে, আপনার অবশ্যই উচিত পরবর্তীতে কাস্টমার বা গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য সম্পর্কে রিভিউ জিজ্ঞেস করা বা কাস্টমারকে পণ্যের বিষয়ে রিভিউ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা। এতে, কাস্টমার মনে করেন আপনি তার ব্যাপারে যত্নশীল, কেননা পণ্য কেনার পর আপনি তাকে ফোন করে পণ্যের বিষয়ে জানতে চাইছেন মানে, আপনি কাস্টমারকে ভুলে যান নি। তাতে কাস্টমারের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো থাকে। তাছাড়া, পণ্য কেনার পর দশজনের মধ্যে পাঁচজন কাস্টমারও যদি পণ্যের বিষয়ে রিভিউ দেন, তবে তা আপনার ব্যবসার জন্য এবং আপনার ওয়েবসাইটের প্রমোশনের জন্য খুবই সহায়ক হবে।

১০. চেক আউট

ই কমার্সে চেক আউট পেইজটি এমন একটি পেইজ, যেখানে সহজভাবে চেক আউট দেয়া না থাকলে, এমনও রেকর্ড আছে দশজন কাস্টমারের মধ্যে সাতজনই চেক আউট পেইজ থেকে ফিরে গেছেন, চেক আউট করেছেন মাত্র তিনজন। এখানে কাস্টমার অ্যাড টু কার্ট করবেন, নাকি বাই নাও করবেন তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। এখনে কাস্টমার অ্যাড টু কার্ট করার পর অনেকসময় পণ্য খুঁজে পান না, কারণ ওয়েবসাইটের উপরে কোণায় ছোট্ট করে কার্টে পণ্যের সংখ্যাগুলো দেখা যায়। যেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। যদি কাস্টমার কার্টের সেই পণ্য কোনোভাবে খুঁজেও নেন, এরপর আবার চেক আউট পেইজে গিয়ে অনেক ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিশাল ফর্ম থাকে বা তিনটা/ চারটা স্টেপ দেয়া থাকে। এতে গ্রাহক/ কাস্টমারকে চেক আউট করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, তাতে কাস্টমার পণ্য কেনার আগ্রহ হারাতে পারেন। সহজ চেক আউট দেয়া না থাকার কারণে ওয়েবসাইটে পণ্য বিক্রির প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। যেমন, ওয়ালটনের ওয়েবসাইটে গেলে আপনি দেখবেন, তাদের চেক আউট প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। এরকম কয়েক ধাপের চেক আউট প্রক্রিয়া কিন্তু কাস্টমারের বিরক্তির কারণ হতে পারে। এছাড়া, চেক আউট পেইজে কাস্টমারের সঠিক তথ্য থাকা উচিত। ধরেন, আপনার ওয়েবসাইটে তিন ধাপের চেক আউট দেয়া আছে, দেখা গেলো ইউজার প্রথম ধাপ পার করেছেন, এরপর তিনি হয়তো কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন এবং পরবর্তী দুই ধাপ তিনি শেষ করেন নি। কোন গ্রাহক কোন কোন স্টেপগুলো পার করছেন সেই তথ্যটি অনেকেই কিন্তু রাখেন না। অথচ, এই রেকর্ড রাখার সিস্টেম আপনার ওয়েবসাইটে থাকা উচিত। এতে আপনি ইউজারকে পরবর্তীতে এই বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারবেন এবং সেভাবে চেক আউট পেইজের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে পারবেন। কেননা, সহজ চেক আউট ছাড়া অনেক গ্রাহকই পণ্য কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন না বা করতে পারবেন না।

শেষ কথা

ই কমার্স ব্যবসা করার সময়ে উপরে উল্লেখিত ভুলগুলো আমরা বেশিরভাগক্ষেত্রে এড়িয়ে যাই। তাই অনেকসময় এই ব্যবসায় সফলতা আসে না। কিন্তু ওয়েবসাইটের এসব ভুল শুধরে নিয়ে যদি আমরা ই কমার্স প্ল্যান করতে পারি, তবে আশা করা যায় সেই ই কমার্স বিজনেস ভালো করবে। এই প্রসেস বা স্ট্রেটেজিগুলো মাথায় রেখেই হাতিলের মতো ওয়েবসাইট আমরা তৈরি করেছিলাম এবং সাইট থেকে ভালো বিজনেস চালাতে আমরা সফল হয়েছিলাম। আর হাতিল কিন্তু এখনও পর্যন্ত ই কমার্স সাইটগুলোর মধ্যে টপ র‍্যাঙ্কে আছে। তাই, আমি আমার দীর্ঘদিনের কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে এ বিষয়ে মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী যে, আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের এই দশটি ভুল ঠিক করে নিয়ে ই কমার্স পরিচালনা করেন তবে এই ব্যবসাতে অবশ্যই আপনি সফলতা পাবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *