Everything a freelancer in eye care can do

চোখের যত্নে একজন ফ্রিল্যান্সার যা যা করবেন

শুধুমাত্র একজন ফ্রিল্যান্সার নয় আমাদের সকলেরই উচিত চোখের যত্নের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। চোখ মানুষের শরীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমান সময়ে একজন মানুষের বাহ্যিক যে অঙ্গ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে সেটি হল তার চোখ। দীর্ঘক্ষণ মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা চোখের ক্ষতির একটি বড় কারণ। 

ইদানিংকালে এগুলো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে একজন ফ্রিল্যান্সার, চোখ নিয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ আমরা জানি, ফ্রিল্যান্সারদের কাজ মূলত কম্পিউটার এ কাজ করার ওপর নির্ভর করে। চাইলেই ফ্রিলান্সারদের পক্ষে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করা বন্ধ বা সীমিত করা সম্ভব হয় নয়। 

একজন ফ্রিল্যান্সার চোখ নিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সেগুলো হলো: চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখে জ্বালা-পোড়া, টান-টান অনুভূতি হওয়া, ক্লান্তি বোধ করা, চোখের পেশিতে চাপ পড়া, চোখে রক্তের চাপ বেড়ে গিয়ে অস্বস্তি তৈরী হওয়া ইত্যাদি। চোখের এই সমস্যা গুলো খুব তাড়াতাড়ি বড় আকারে দেখা দেয় না। একারণে আমরা এগুলো নিয়ে উদাসীন থাকি। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এগুলো প্রকট আকার ধারণ করে বিভিন্ন স্থায়ী চোখের অসুখে রূপ নেয় যেমন, ঝাপসা দৃষ্টি, কোন বস্তু দেখতে ফোকাস করতে সমস্যা, দৃষ্টিহীনতা, ঘুমের সমস্যা, মাথাব্যাথা, শরীরের মেটবলিজম ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি।

একজন ফ্রিল্যান্সার এর কাজ হয় মূলত কম্পিউটার ব্যবহারকে কেন্দ্র করে। সুতরাং আমরা বলতে পারিনা যে চোখের এ সমস্যা গুলো এড়াতে কম্পিউটার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বরং আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি যেগুলোর মাধ্যমে চোখের ক্ষতি হওয়ার মাত্রাকে যথা সম্ভব কমিয়ে আনা যেতে পারে। যেমন:-

  • একটানা অনেক সময় ধরে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে না থাকা

দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার স্ক্রিন ব্যবহার অনেক ক্ষতিকর। চোখের সমস্যাগুলো শুরু হয় অনেকটাই এই কারণে। চোখ অনেক বেশি নড়াচড়া করতে হয় বলে চোখে ক্লান্তি বোধ হয় যাকে বলা হয় “আই স্ট্রেইন”। পরবর্তীতে এটি চোখে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। সেজন্য আমাদের উচিৎ কাজের মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া। এতে চোখের অঙ্গগুলো বিশ্রাম পাবে। চোখের ওপর চাপ কমবে। চোখের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে। চোখের সুস্থতায় এটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

  • চোখ থেকে কম্পিউটার স্ক্রিনটি যথা সম্ভব দূরে রাখা

চোখের গঠন অনুযায়ী কোন বস্তু দেখার আদর্শ দূরত্ব ৬ মিটার। কিন্তু কম্পিউটার স্ক্রিন যদি আমরা এতো দূরে রাখি তাহলে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এমন দূরত্বে মনিটরটি থাকতে হবে যাতে চোখের জন্য সহনীয় হয়। কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে অন্তত একহাত দূরে বসতে হবে  যাতে চোখের ওপর কোন চাপ না পড়ে। এর পাশাপাশি সুবিধামত মনিটরটি একটু টিল্ট বা বাঁকা করে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

  • চারপাশের আলোর সাথে ব্রাইটনেস সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা

ঘরে যদি কম আলো থাকে তাহলে ব্রাইটনেস কমিয়ে নেওয়া আবার যদি বেশি থাকে তাহলে বাড়িয়ে নেওয়া। তবে লক্ষ রাখতে হবে যাতে মনিটর ব্যবহারের সময় অন্যকোন আলো সরাসরি চোখে না পড়ে।

  • চোখের ব্যায়াম করা

শরীরের সুস্থ্যতার জন্য আমরা বিভিন্নরকম ব্যায়াম করে থাকলেও চোখের ব্যায়াম করার দিকে আমাদের আগ্রহ তেমন একটা দেখা যায় না। অনেকে আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জানিও না। অথচ চোখের ব্যায়ামগুলো খুব সহজে অল্প সময়েই করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে চোখ ভালো রাখার জন্য চোখের ব্যায়াম খুবই উপকারী। চোখের ব্যায়ামগুলো কি কি এবং একজন ফ্রিল্যান্সার এগুলো কিভাবে করবেন তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। 

  • ‘২০-২০-২০’ নিয়ম

এটি চোখের একটি বহুল প্রচলিত ও উপকারী ব্যায়াম। ‘২০-২০-২০’ এর অর্থ হলো প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের একটি বস্তুর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ বা ফোকাস করে রাখা। এই ব্যায়ামটি করলে চোখের ওপর চাপ কমানো সহজ হয়।

  • চোখ পাকানো

চোখ পাকানো বা রোল করা একটি সহজ ব্যায়াম। এটি চোখে স্ট্রেইন বা টান-টান ভাব কমাতে সাহায্য করে। এটা করার জন্য প্রথমে মাথা স্থির রেখে ডানে ও বাঁয়ে কয়েকবার তাকাবেন , এরপর কয়েকবার ওপরে ও নিচে তাকাবেন। 

  • চোখ মিটমিট করা

চোখ মিটমিট করলে চোখের ওপর একধরনের তৈলাক্ত পানি আসে, যা চোখকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। কাজের চাপে অনেকে সারাক্ষণ চোখ খুলে রাখতে হয় স্ক্রিনের ওপর। যে কারণে অনেকক্ষণ কাজ করার পর চোখ জ্বালা করে। এ জন্য কাজের ফাঁকে ২০ মিনিট পরপর ২০-৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে চোখ মিটমিট করলে চোখ বিশ্রাম পায় এবং শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।

  • হাতের তালু উষ্ণ করে চোখে লাগানো

এটি অত্যন্ত আরামদায়ক একটি ব্যায়াম এর সাথে এটি চোখের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। নিয়ম হলো দুই হাতের তালু একে অপরের সঙ্গে ঘষে একটু উষ্ণ হওয়ার পর চোখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপর উষ্ণ তালু রাখবেন এভাবে ৪ থেকে ৫ বার করবেন। 

  • দৃষ্টি নিবদ্ধ বা ফোকাস করে রাখা

কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে একটানা কাজ করার সময় ১-২ মিনিট বিরতি নিয়ে দূরে কোথাও দৃষ্টি নিবদ্ধ বা ফোকাস করাটা চোখের জন্য খুবই ভালো ব্যায়াম। এটি করতে দূরে ও কাছে ১০ সেকেন্ড করে বিরতি দিয়ে দিয়ে ফোকাস করবেন। আর যদি দূরের সবুজ রঙের কোনো জিনিসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যায়, তাহলে তা আরও ভালো হয়। সবুজ রং চোখকে আরাম দেয়। এভাবে কমপক্ষে পাঁচবার করবেন। 

  • নিয়মিত চোখের পলক ফেলার দিকে লক্ষ রাখা

আমরা কাজের চাপে চোখের পলক ফেলতে ভুলে যাই। চোখের পলক ফেলা চোখের একটি প্রাকৃতিক ব্যায়াম। নিয়মিত এবং স্বাভাবিকভাবে পলক ফেলতে হবে।

  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

পুষ্টিকর, বিশেষ করে চোখের জন্য উপকারী খাবার খাওয়া চোখের যত্নে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। যেমন:-

  • ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ডিম, গরুর কলিজা, দুধ, ঘি, মাখন, গাজর, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। 
  • ভিটামিন সি সম্মৃদ্ধ খাবার। চোখের কোষ নষ্ট হওয়া রোধ করতে এবং রক্ত চলাচলে ভিটামিন সি অবদান রাখে। যেমন: কমলালেবু, লেবু, টমেটো, পেয়ারা, স্ট্রবেরি ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে।
  • ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার। চোখের পানি পড়া রোধ করতে ভিটামিন ই কার্যকরী। যেমন: বাদাম, চিংড়ি, অলিভ অয়েলে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। 
  • ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার। যেমন: রুই, কাতলা, ইলিশ, মাগুর, সামুদ্রিক মাছ, ফ্ল্যাক্স সিড অয়েল থেকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। 
  • বিটা ক্যারোটিন সম্মৃদ্ধ খাবার। যেমন:  গাজর, করলা, মিষ্টি আলু, যা চোখ শুষ্ক হওয়া রোধ করে। 
  • বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি। এগুলোতে রয়েছে লুইটেন যা চোখের জন্য উপাদেয়। এর সাথে বেদানা, আম, জাম তরমুজ, চেরি, কাঁচা ও পাকা পেঁপে চোখের অনেক উপকার করে। এ ছাড়া পালং শাক, কচু শাক ও অন্য সবুজ শাকসবজি চোখের জন্য খুবই ভালো। 
  • নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা এবং চশমা ব্যবহার করা

চোখের যত্নের বেলায় এটি একটি জরুরী কাজ। যেটি নিয়ে আমরা প্রায়ই অবহেলা করি। এটি অবহেলা করা একেবারেই অনুচিত। নিয়মিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চোখ পরীক্ষা করা ও প্রয়োজনীয় চশমা ব্যবহার করলে চোখের যেকোন ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। 

আরো জানুন: কম্পিউটারে রাত জেগে কাজ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

পরিশেষ

ওপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি। একজন ফ্রিল্যান্সার চোখের যত্ন নেওয়ায় কিছু নিয়ম মেনে চললে উপকার পাবেন। তবে এর জন্য সবচেয়ে জরুরী হলো সচেতনতা। কাজ করার ক্ষেত্রে  সচেতন ভাবে কাজের সময় ও কাজের ধরণ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত বিরতি নেওয়া, স্ক্রিনে ব্রাইটনেস নিজের সুবিধা মত বাড়িয়ে বা কমিয়ে ব্যবহার, চোখে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো মেনে চলার মাধ্যমে একজন ফ্রিল্যান্সার চোখের যত্ন নিতে পারেন।

মনে রাখতে হবে চোখ অমূল্য সম্পদ। মহান আল্লাহ আমাদের যত নিয়ামত দান করেছেন, চোখ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইসলামের বিধি বিধান গুলো মানার মাধ্যমেও চোখের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। নিয়মিত সালাতের জন্য ওযু করলে চোখ ধোয়া হয় এবং চোখ ভেজা থাকে। চোখ ভালো রাখার জন্য চোখ ভেজা থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও দুয়া ও যেকোনো অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের চোখ দুটোকে হেজাযত করেন।

আশা করি এই আর্টিকেল থেকে একজন ফ্রিল্যান্সার চোখের যত্ন কিভাবে নিতে হয় তা জানতে পারবেন এবং সচেতন হতে পারবেন। আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন কমেন্টের মধ্যে করতে পারেন। আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর আমি কমেন্টের মধ্যে দেয়ার চেষ্টা করবো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *