ফেসবুক মার্কেটিং হ্যাকস্ঃ ফেসবুক এর মাধ্যমে ব্যবসার প্রচার ও প্রসার
নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন? অথবা ইতিমধ্যে শুরু করেছেন? নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করলে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য প্রথমেই যেটা দরকার, আপনার ব্যবসার পরিচিতি বাড়ানো বা জনপ্রিয়তা তৈরি করা। যত দ্রুত আপনার ব্যবসার পরিচিতি বাড়াতে পারবেন, তত দ্রুত আপনার ব্যবসা প্রসারিত হতে শুরু করবে। তাহলে এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন, ব্যবসার জনপ্রিয়তা তৈরি করতে বা পরিচিতি বাড়াতে সবচেয়ে দ্রুত এবং কার্যকর মাধ্যম কোনটি?
চলুন একটি গল্পের মাধ্যমে বিষয়টিকে একটু সহজভাবে চিন্তা করিঃ
গ্রামের সামাদ সাহেব জীবনের একটা লম্বা সময় বিদেশে কাটিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন এবং খাঁটি গাওয়া ঘি-এর ব্যবসা শুরু করেছেন। প্রথমত, নতুন ব্যবসা, দ্বিতীয়ত ঘি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস না। এছাড়া শুধুমাত্র নিজের এলাকার কিছুসংখ্যক মানুষ এবং আত্মীয়-স্বজন জানেন যে, সামাদ সাহেব খাটি ঘি এর ব্যবসা শুরু করেছেন। তাই এলাকাবাসী এবং আত্মীয়রা মাঝে মাঝে ঘি কিনে থাকেন, কিন্তু সামাদ সাহেবের প্রত্যাশা অনুযায়ী বড় পরিসরে বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় সামাদ সাহেব দিনদিন বেশ হতাশ হয়ে পড়ছেন।
এমন সময় সামাদ সাহেবের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মিলন ছুটি কাটাতে বাড়ি এলো। বাবার ব্যবসার পরিস্থিতি জানার পরে সে তাদের ব্যবসার নামে একটি ফেসবুক পেজ খুললো এবং নিয়মিত সেখানে ঘি-এর চমৎকার সব ছবি-ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করলো। কিছুদিন যেতে না যেতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঘি-এর অর্ডার আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সামাদ সাহেবের প্রসারিত হয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন পণ্যের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিলেই ব্যবসা বাড়তে শুরু করবে? না! বিষয়টা আসলে তেমন না। পণ্যের ছবি তুলে বা ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করারও কিছু নিয়ম-কানুন এবং কৌশল রয়েছে যা অডিয়েন্সকে আপনার পণ্য সম্পর্কে একটি পরিষ্কার এবং আকর্ষণীয় ধারণা প্রদাণ করবে। একইসাথে, আপনার পণ্য কেনার জন্য অডিয়েন্সের আগ্রহ বাড়াবে এবং এগুলো অনুসরণ করলে আপনার ব্যবসা দ্রুত বাড়তে শুরু করবে। মূলত এই কৌশলগুলোই হলো ফেসবুক মার্কেটিং হ্যাকস্।
আজকের ব্লগে আমরা কয়েকটি প্রধান প্রধান ফেসবুক মার্কেটিং হ্যাকস্ সম্পর্কে আলোচনা করবো এবং এগুলো কীভাবে আপনার ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করে সে বিষয়ে জানবো। চলুন শুরু করা যাক!
প্রধান কয়েকটি ফেসবুক মার্কেটিং হ্যাকস্
ফেসবুক হচ্ছে এমনই একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার বিশ্বব্যাপী মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কয়েক কোটি এবং এটি ছোট ছোট বা নতুন কোনো ব্যবসার পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে ফলপ্রসূ মাধ্যম। ছোট বা নতুন কোম্পানি থেকে শুরু করে কোটি কোটি ডলার বাজেটের কোম্পানি, সবার কাছেই তাদের পণ্য বা সার্ভিসের প্রোমোশন করার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ফেসবুক। বৈশ্বিক তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষ প্রতি মাসে গড়ে ১৯.৫ ঘন্টা সময় ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এই সময়ের হার আরো বেশি।
তাই, আপনার স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষজনের সাথে আপনার ব্যবসার সংযোগ স্থাপনের জন্য ফেসবুক মার্কেটিং সেতুবন্ধন রূপে কাজ করে। ফেসবুকে ফ্রী এবং পেইড দুই ভাবেই মার্কেটিং করা যায়। এই ক্ষেত্রটির পরিধি আসলে বিশাল। তাই, আপনি যদি ব্যবসা বাড়ানোর একটি ফলপ্রসূ উপায় খুঁজে থাকেন, সেক্ষেত্রে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি! আমি কয়েকটি ফেসবুক মার্কেটিং হ্যাকস্-এর তালিকা তৈরি করেছি যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই প্রয়োজনীয় কিছু কৌশল। চলুন দেখে নিই,
১. আপনার পণ্য সম্পর্কিত একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করুন
ফেসবুক মার্কেটিং করে সফল হওয়ার প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত একটি আকর্ষণীয় ফেসবুক পেজ তৈরি করা। তাই এমন একটি নাম দিয়ে একটি পেজ তৈরি করুন, যা আপনার ব্যবসার প্রতিনিধিত্ব করবে এবং নাম থেকেই ব্যবসার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। পেজের প্রোফাইলে আপনার পণ্য বিষয়ক একটি আকর্ষণীয় ছবি এবং কভার ফটো ব্যবহার করুন যা অনলাইন জগতে আপনার ব্যবসার প্রথম পরিচায়ক হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ প্রোফাইল এবং কভার ফটো দুইটি যেন অবশ্যই আপনার ব্যবসায়িক বিষয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
প্রোফাইল এবং কভার ফটোর মতো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফেসবুক “বায়ো” ; এখানে আপনি খুব সংক্ষিপ্ত কিন্তু আকর্ষণীয়ভাবে নিজের ব্যবসার বিষয়বস্তু এবং বিশেষত্ব তুলে ধরবেন কয়েকটি শব্দের মাধ্যমে যেন এটি আপনার ব্যবসার প্রধান লক্ষ্যকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে৷ পেজের অন্যান্য ইনফরমেশন পূরণ করার সময় অবশ্যই আপনার ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা এবং ওয়েবসাইটসহ আপনার সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমগুলো স্পষ্ট এবং বিস্তারিতভাবে সংযুক্ত করবেন।
আপনার পেজের লিংক বা URL কাস্টমাইজ করে আপনি নিজের ব্যবসার নাম উপস্থাপন করতে পারেন। একটি সুসজ্জিত, সুসংগঠিত এবং আকর্ষণীয় পেজ আপনার ব্যবসার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। তাই ফেসবুক পেজ তৈরির ব্যাপারে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে।
২. আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স সম্পর্কে জানুন
আপনার ব্যবসায় আশানুরূপ সাফল্য পেতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সঠিক ক্রেতা শনাক্ত করা এবং তাদের চাহিদা বোঝা। এক্ষেত্রে আপনার বর্তমান ক্রেতা এবং তাদের চাহিদা বা আগ্রহ সম্পর্কে পরিসংখ্যান পেতে পেজের ইনসাইট নামক টুল ব্যবহার করুন। এছাড়া অন্যান্য অনেকগুলো এনালাইসিস টুল রয়েছে যা ব্যবহার করে আপনি আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স বা ক্রেতাদের কোন ধরণের পণ্য পছন্দ এবং কোন ধরনের পণ্যের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি তা জানতে পারবেন৷
এছাড়া আপনার অডিয়েন্সের বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান এবং আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলোও আপনি ইনসাইট ব্যবহার করে নির্ধারণ করতে পারেন। নির্ধারিত এই বিষয়গুলো আপনাকে অডিয়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বাছাই করতে এবং বিজ্ঞাপন তৈরি করতে সাহায্য করবে। ফলে, আপনার অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বাড়বে এবং পাশাপাশি একটা সময় আপনার প্রতিটি পোস্টের ট্রাফিক আপনাআপনি বাড়তে শুরু করবে।
৩. কনটেন্ট পোস্ট করার রুটিন তৈরি করুন
প্রতিটি কাজের সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে কাজটির ধারাবাহিকতার উপর। একটি ফেসবুক পেজকে একটিভ এবং এনগেজিং রাখার মূল চাবিকাঠি হলো পেজটির কনটেন্ট পোস্ট করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। তাই, আপনি একটি কনটেন্ট টপিক ক্যালেন্ডার তৈরি করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী নিয়মিত পোস্ট করার রুটিন তৈরি করুন।
রুটিনমাফিক পোস্ট করার ফলে আপনার ফলোয়াররা আপনার পেজ থেকে নতুন আপডেট পাওয়ার বুঝতে পারবে এবং এতে করে ওই নির্দিষ্ট সময় অন্যান্য সময়ের চেয়ে আপনার পোস্টের ট্রাফিক অনেকগুণ বেশি থাকবে। প্রতিদিন গতানুগতিক পোস্ট করতে থাকলে পেজের রিচ ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পেজের রিচ ঠিক রাখতে এবং ফলোয়ারদের আগ্রহী ও কানেক্টেড রাখতে তথ্যবহুল, মাঝে মাঝে বিনোদনমূলক ও প্রচারমূলক পোস্ট করুন।
ছবি, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক এবং স্টোরিসহ অন্যান্য বিষয়বস্তু পোস্ট করুন, যাচাই করুন কোন বিষয়বস্তুটি আপনার ফলোয়ারদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ কোন ধরণের পোস্টে রিচ এবং এনগেজমেন্ট বেশি হয় সেটা লক্ষ্য করুন। তারপর সে অনুযায়ী নিয়মিত পোস্ট করুন।
৪. ফেসবুক এ্যাডস্ ব্যবহার করুন
আপনার কনটেন্টগুলোকে শুধুমাত্র আপনার ফলোয়ারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আরো বৃহত্তর অডিয়েন্সের কাছে পৌছানোর একটি বিশাল মাধ্যম হলো ফেসবুক এ্যাডস্ বা বিজ্ঞাপন। কিন্তু এই এ্যাড রান করতে গেলে আপনার কিছু টাকা খরচ করতে হবে। এটি ফ্রী না, পেইড মার্কেটিং। এ্যাডের বিভিন্ন ফরম্যাট বা ধরন রয়েছে। যেমন ইমেজ এ্যাড, ভিডিও এ্যাড এবং অ্যানিমেশনের মাধ্যমেও আজকাল এ্যাড দেওয়া হচ্ছে। তাই অডিয়েন্সের আগ্রহ, পছন্দ এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে আপনি ফেসবুকের এ্যাড রান করা শুরু করতে পারেন।
যেহেতু এ্যাড রান করা একটি পেইড মার্কেটিং, এর আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো আপনি আপনার পছন্দ মতো টার্গেটেড কাস্টমার সিলেক্ট করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী মার্কেটিং করতে পারবেন। এই পেইড মার্কেটিং হ্যাকটি বেশ কার্যকর!
৫. গুণগত মানসম্পন্ন সার্ভিস দিয়ে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করুন
আপনি নিশ্চয়ই আপনার অডিয়েন্সকে এনগেজড্ রাখতে চান? তাহলে আপনার পণ্যের বিবরণ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে আপনার ফেসবুক পেজে তথ্যবহুল এবং চমকপ্রদ বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে পোস্ট করুন। আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্টিকেল, ভিডিও, টিপস এবং ইনফোগ্রাফিক পোস্ট করুন যাতে এক ধরনের পোস্ট দেখতে দেখতে কাস্টমারদের কাছে আপনার পেজের বিষয়বস্তু একঘেয়ে না হয়ে যায়। অডিয়েন্সের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া, পোল তৈরি করা, কমেন্ট এবং মেসেজের দ্রুত রিপ্লাই দিলে আপনার ব্যবসার প্রতি কাস্টমারদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে এবং তারা উৎসাহী হয়ে উঠবে।
এছাড়া, আপনি যখন আপনার পোস্টের মাধ্যমে অডিয়েন্সের উদ্দেশ্যে কোনো প্রশ্ন ছুড়ে দিবেন, স্বাভাবিকভাবেই তারা সেখানে কমেন্ট করবে এবং আপনি সেটার প্রতিত্তোর দিবেন তখন আপনাআপনিই আপনার পোস্টের রিচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার পোস্টের বিষয়বস্তু যত আকর্ষণীয় হবে, আপনার ব্যবসার পরিধি ততই বাড়তে থাকবে যা আপনাকে বাড়তি খরচ ছাড়াই এক্সপোজার পেতে সাহায্য করবে।
আরো জানুন: ই কমার্স এবং এফ কমার্স এর পার্থক্য
৬. ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করুন এবং এতে কাজ করুন
ফেসবুক গ্রুপ হলো কোনো একটি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরিকৃত একটি কমিউনিটি। বেশিরভাগ মানুষ তার ব্যবসার শুরুতে শুধুমাত্র পেজ নিয়ে ভাবে এবং আগাতে চায়। তারা ভুলে যায় ফেসবুকের আরো অনেকগুলো কার্যকরী টুলস আছে। লক্ষ্য করলে আপনি দেখবেন, ইদানীং ফেসবুক পেজগুলোর অর্গানিক রিচ প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। তার মানে আপনার পোস্টগুলো পেইড বুস্ট বা পেইড মার্কেটিং ছাড়া বেশি রিচ বা এনগেজমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
এক্ষেত্রে নতুন ব্যবসা বা ছোট ব্যবসার জন্য পেইড মার্কেটিং-এর জন্য টাকা খরচ করা খুব সহজ কাজ নয়। প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে টিকে থাকার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত পণ্য বা সেবার দাম কমাতে হচ্ছে যেখানে ডলারের মূল্য বেড়েই চলেছে। তাই, ফেসবুক পেজে অর্গানিক রিচ কম হলেও গ্রুপে কিন্তু যথেষ্ট রিচ হয়। ফলে, আপনি যদি পেজের পাশাপাশি একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেন এবং সেটি নিয়ে কাজ করেন তবে অর্গানিক রিচ নিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
কারণ, ফেসবুক গ্রুপ অনেকটা পরিবারের মতো। এখানে সবাই নিজের মনের ভাব পোস্ট করতে পারে। আপনার প্রদানকৃত সেবা বা পণ্যগুলোর মধ্যে কোনটি তাদের বেশি ভালো লাগে সে ব্যাপারে মতামত প্রকাশ করতে পারে। এছাড়া, আপনি তাদের মতামত জানতে চেয়ে পোস্ট করতে পারেন। সেখানে তারা কমেন্ট করে নিজেদের পছন্দের কথা জানাতে পারে এবং আপনি সে অনুযায়ী তাদের সেবা প্রদান করবেন। এতে একদিকে আপনার পোস্টের রিচ বাড়বে, অন্যদিকে আপনার ব্যবসা সামনের দিকে আগাতে শুরু করবে।
৭. ফেসবুক গ্রুপে অডিয়েন্সের অংশগ্রহণ বাড়ান
ফেসবুক গ্রপ আপনার পেজের রিচ বাড়াতে এবং কাস্টমারদের আরো বেশি এনগেজড রাখতে সাহায্য করে। একটি ফেসবুক গ্রুপ আসলে একটি পরিবারের মতো। এখানে আপনি গ্রপের সদস্যদের সাথে যত আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে তত বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। কারণ গ্রুপে নিয়মমাফিক আপনার ব্যবসা বা পণ্য সম্পর্কিত আপডেট দিলে আপনার প্রতি গ্রুপের সদস্যদের তুলনামূলক বেশি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।
তাই আপনার ব্যবসাকে বর্ধিত অডিয়েন্সের কাছে পরিচিত করতে চাইলে একটি সুসংগঠিত ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করুন। দক্ষ মডারেটর এবং এডমিনের মাধ্যমে গ্রুপের সকল কাজ পর্যবেক্ষন করান এবং গ্রুপে অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বাড়ান। অবশ্যই আপনি নিজেও গ্রুপ মনিটরিং করবেন, শুধুমাত্র এডমিন বা মডারেটরদের উপরে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে চলবে না। আপনি নিজে পোস্ট করবেন, গ্রুপ মেম্বারদের পোস্টে কমেন্ট করার মাধ্যমে তাদের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করুন।
৮. ফেসবুক লাইভ ব্যবহার করুন
আপনি যদি সরাসরি আপনার অডিয়েন্সের সাথে যুক্ত হতে চান, সেক্ষেত্রে ফেসবুক লাইভ হতে পার অব্যর্থ শক্তিশালী টুল। সাধারণত, লাইভ ভিডিওগুলো এনগেজমেন্ট হয় অনেক বেশি। কারণ আপনার অডিয়েন্স সরাসরি আপনার সাথে যুক্ত হতে পারে এবং তাদের প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর পেতে পারে। তাই অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে ফেসবুক লাইভের সাহায্য নিন।
লাইভ সেশন শুরু করার কিছুক্ষণ আগে লাইভে আসার বার্তা জানিয়ে পোস্ট করুন অথবা আপনার অডিয়েন্সকে নোটিফিকেশন পাঠান। এতে বেশি মানুষ আপনার লাইভে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া, লাইভের শেষে যেকোনো ডিসকাউন্ট কোড বা প্রোমোশন দিতে পারেন, এতে দর্শক আরো বেশি আকৃষ্ট হবে।
৯. প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন
মাঝে মাঝে আপনার ফেসবুক গ্রুপের সকল মেম্বারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন। এতে আপনার ব্যবসার এনগেজমেন্ট এবং ফেসবুক পেজের ফলোয়ার বেশ অনেকটা বেড়ে যাবে। তাই মজাদার এবং সহজ কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন এবং প্রতিযোগিতার নিয়মগুলোর মধ্যে কিছু নিয়ম এমন হবে যে, অংশগ্রহনকারীরা পুরস্কার জেতার জন্য আপনার পোস্ট বা পেজে লাইক, শেয়ার অথবা কমেন্টে নিজের পরিচিতজনদের মেনশন দিতে হবে।
এতে শুধুমাত্র আপনার পেজের ভিজিটর-ই বাড়বে না, সাথে সাথে নতুন অডিয়েন্সদেরকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহী করবে। শেয়ার এবং মেনশনের মাধ্যমে আপনার ব্যবসা আরো বর্ধিত অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যাবে।
১০. ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কন্ট্র্যাক্ট বা চুক্তি করুন
ইদানীংকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ভীষণ জনপ্রিয়। ছোট বা নতুন কোনো ব্যবসার জন্য ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং একটি সাশ্রয়ী এবং জনপ্রিয় মার্কেটিং কৌশল। কম বাজেটে একসাথে অনেক বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর জন্য এটি একটি চমৎকার মাধ্যম। তাই প্রথমেই আপনার বাজেট নির্বাচন করুন। অর্থাৎ আপনার পণ্যের মার্কেটিং করার জন্য আপনি এই মুহুর্তে ঠিক কত টাকা ইনভেস্ট করবেন সে বিষয় সিদ্ধান্ত নিন। এরপর আপনার এই বাজেটের মধ্যে কাজ করতে আগ্রহী ইনফ্লুয়েন্সার বা মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সারদের শনাক্ত করুন। এসময় একটা বিষয় বিশেষ নজর রাখবেন, আপনার পণ্যের সাথে সম্পর্কিত অডিয়েন্স এবং যাদের ফেসবুকে যথেষ্ট ফলোয়ার রয়েছে তাদেরকে টার্গেট করুন।
সহজ করে বলতে গেলে, মনে করুন আপনি ঘি-এর ব্যবসা করছেন। কিন্তু মার্কেটিং-এর জন্য কন্ট্র্যাক্ট করলেন একজন মডেল বা ফ্যাশন ডিজাইনারের সাথে। এখন একজন মডেল বা ফ্যাশন ডিজাইনারের অসংখ্য ফ্যান- ফলোয়ার থাকতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ফলোয়ারই তার মডেলিং বা ফ্যাশনের জন্য তাকে ফলো করে। তাই, সে যদি ঘি-এর প্রমোশন করে, তাহলে খুব বেশি অডিয়েন্স ঘি কিনতে আগ্রহী হবে না। কিন্তু যদি একজন ফুড ব্লগার বা শেফ-এর মাধ্যমে এই একই কাজ করেন, তবে একটি বিশাল অডিয়েন্স আপনার ঘি কেনার জন্য উৎসাহী হবে।
এখানে মূলত মানসিক বিষয়টি মূখ্য হিসেবে কাজ করে। আমরা সবসময়ই অভিজ্ঞ মানুষের পরামর্শ নিতে পছন্দ করি। তাই একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের বদলে যখন একজন শেফ ঘি নিয়ে কথা বলবে, তখন মানুষ শেফের কথাতেই বেশি আশ্বস্ত হবে।
তাই আপনার পণ্যের সাথে সম্পর্কিত কাজ করে যেসব ইনফ্লুয়েন্সার, তাদের সাথে যোগাযোগ করুন (ইমেইল বা ফোনে কথা বলে) এবং স্পনসর সম্পর্কে যাবতীয় আলোচনা করুন। ফেসবুকে যাদের বিশাল একটা ফ্যান বেজ রয়েছে, তারা যদি আপনার সার্ভিস বা পণ্য সম্পর্কে নিজেদের পেজ বা প্রোফাইলে পোস্ট করে তাহলে আপনার ব্র্যান্ডের রিচ বেড়ে যাবে অনেকখানি। পাশাপাশি নতুন ফলোয়াররা আকৃষ্ট হবে আপনার ব্র্যান্ড এবং পণ্য সম্পর্কে জানার জন্য।
১১. ফলোয়ারদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন
ফেসবুক মার্কেটিং কৌশল রপ্ত করে একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পোস্টের ট্রাফিক বাড়ানো। তাই আপনার পোস্টের কমেন্ট এবং ইনবক্সের মেসেজগুলো হোক ইতিবাচক বা নেতিবাচক, উভয় মন্তব্যগুলোতেই সমানভাবে ধৈর্য্য সহকারে রেসপন্স করুন। ইতিবাচক মন্তব্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন এবং নেতিবাচক মন্তব্যগুলোও পেশাদারিত্বের সাথে সমাধান করুন। সবসময় সর্বোচ্চ ভালো কোয়ালিটির পণ্য বা সেবা প্রদান নিশ্চিত করুন।
ফলোয়ার, কাস্টমার এবং সর্বোপরি অডিয়েন্সের সাথে সুসম্পর্ক আপনার ব্র্যান্ডকে আরো বেশি এনগেজড করে তোলে এবং অডিয়েন্সের মনে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা তৈরি করে। এতে করে ভালো সেবা প্রাপ্ত কাস্টমাররা আপনার সুনাম তাদের পরিবার, বন্ধুমহল এবং পরিচিতজনদের সাথে বলবে, যা আপনার ব্যবসা সম্প্রসারণে বেশ কার্যকরী!
আরো জানুন: ই কমার্স এবং এফ কমার্স এর পার্থক্য
পরিশেষে
বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর যুগে আপনি যেই সেক্টরেই কাজ করুন না কেন, মার্কেটিং এবং ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স আপনার থাকতেই হবে। নয়তো এই প্রযুক্তির দুনিয়ায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই, মার্কেটিং সম্পর্কে জানুন, এর প্রকারভেদ জানুন, ফ্রী এবং পেইড মার্কেটিং সম্পর্কে জানুন। ব্যবসা শুরুর আগে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করুন। বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি। আপনার থেকে ভালো সার্ভিস পেলে তারা উত্তেজনা প্রবণ হয়ে আপনার সুনাম ছড়িয়ে দিবে চারদিকে, নিজেও আপনার দারস্থ হবে বারবার। তাই এমনভাবে মার্কেটিং কৌশলগুলো রপ্ত করুন, যাতে একই কাস্টমার দ্বিগুণ, তিনগুণ, বহুগুণে বারবার ফিরে আসে আপনার সেবা পেতে!
আর আকর্ষণীয় সব মার্কেটিং কৌশল রপ্ত করার জন্য উপরে বর্ণিত ফেসবুক মার্কেটিং হ্যাকস্ আপনার পথপ্রদর্শক হতে পারে!