tricks to recognize fake news on facebook

ফেসবুকে ভুয়া খবর চেনার কৌশলঃ সচেতন হোন, সুরক্ষিত থাকুন!

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নিলেন, শুরু করলে ফেসবুক স্ক্রলিং। স্ক্রল করতে করতে আপনার চোখে পড়লো একটি শিরোনাম,”আজ রাতের মধ্যে হতে পারে ভয়াবহ ভূমিকম্প! লন্ডভন্ড হয়ে যেতে পারে আপনার শহর!” শিরোনামটি দেখে আপনি বেশ ভয় পেয়ে গেলেন, সাথে সাথে পোস্টটি শেয়ার করলেন আপনার বন্ধুর সাথে। আপনার বন্ধুও পোস্টটি তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করলো। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আপনার কোনো এক বন্ধু আপনকে জানাল সে খবরটি যাচাই করেছে এবং জানতে পেরেছে যে খবরটি আসলে সম্পূর্ণ ভুয়া। 

আমাদের চারপাশে আমরা প্রায়ই এমন ঘটনা দেখে থাকি৷ প্রায় সবার সাথেই এই ধরনের ঘটনা কমবেশি ঘটে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই ঘটনার ফলাফল কেমন হতে পারে? এসব ঘটনা আসলে গুরুতর ফলাফল বয়ে আনতে পারে। 

আজকাল ফেসবুক আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সামাজিক, রাজনৈতিক, দেশীয়, ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ খবরের পাশাপাশি ফেসবুকে মাঝে মাঝেই মারাত্মক ভুয়া খবর দেখা যায়। অনেক সময় এই ভুয়া খবর আমাদের বিভ্রান্ত করে ফেলে, কখনো কখনো আবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তাই, এসব সামাজিক অস্থিতিশীলতা, বিশৃঙ্খলা, এবং বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দরকার ফেসবুকে সঠিক তথ্য যাচাই করার পরে অন্যদের সাথে শেয়ার করা। ফেসবুকের তথ্যগুলো সঠিক কি না যাচাই করতে এবং ভুয়া খবর চিনতে কিছু কৌশল জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। 

এই ব্লগে আমরা কী কী কৌশল অবলম্বন করলে আপনি ফেসবুকে ভুয়া খবর চিনতে পারবেন, নিজের নিরাপদ থাকতে পারবেন এবং অন্য দেরও সচেতন করতে পারবেন সেসব বিষয় আলোচনা করবো। কারণ, সচেতনতাই হচ্ছে ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। 

১. ভুয়া খবরের বৈশিষ্ট্য এবং ছড়ানোর কারণ

ক. সংবেদনশীলতা এবং উত্তেজনা সৃষ্টি 

সাধারণত মানুষের আবেগকে হাতিয়ার বানিয়েই ভুয়া খবর তৈরি করা হয়, যেন এই খবর পাওয়া মাত্রই মানুষের আবেগে আঘাত করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ধর্মীয় বিষয়, জাতিগত বা রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে ভুয়া খবর তৈরি হলে তার মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। এই ধরনের খবরগুলোতে সাধারণত উত্তেজনাপূর্ন শিরোনাম ও বক্তব্য ব্যবহার করা হয়, যা মানুষকে দ্রুতই খবরটি সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করতে উৎসাহিত করে। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের খবরের শিরোনামগুলো হয় চমকপ্রদ এবং আকর্ষণীয়, যেমন “দেখুন কি ঘটেছে, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারবেন না!”, “এবার বিস্ফোরক প্রমাণ মিললো!”, ইত্যাদি। 

খ. ভুল তথ্য ও ভুয়া উৎস

সাধারণত অসত্য বা ভিত্তিহীন তথ্যের উপর ভিত্তি করে ভুয়া খবর তৈরি হয়। এর মধ্যে ভুল পরিসংখ্যান, মিথ্যা অথবা বিকৃত কোনো দাবিও থাকতে পারে। ভুয়া খবর তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় অস্পষ্ট, অপ্রাসঙ্গিক বা বিকৃত কোনো ছবি বা ভিডিও, যা সবসময়ই প্রকৃত ঘটনার সাথে কোনো সম্পর্ক থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, পুরনো কোনো ঘটনার ছবি বা ভিডিওকে নতুন ঘটনার প্রমাণ হিসেবে দেখানো হতে পারে। এছাড়া, ভুয়া খবরের কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র বা উৎস থাকেনা। 

গ. গুজব এবং মিথ্যা প্রচারণা 

অনেক সময় ভুয়া খবরগুলো সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে প্রচারিত হয়। এসব খবর কোনো বিশেষ গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, বা ব্যক্তি বিশেষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারণা চালাতে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক খবর ফেসবুকে পোস্ট করে দিলে খবরটি তার অনুসারী, কর্মক্ষেত্র, এবং সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ঘ. দ্রুত বিস্তার 

ফেসবুকে বিতর্কিত বা চাঞ্চল্যকর কোনো খবর খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ভুয়া খবরের ক্ষেত্রে এই বিস্তার অনেক বেশি দ্রুত হয়, কারণ মানুষ এসব খবরের প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আগ্রহী হয়ে শেয়ার করে ছড়িয়ে দেয়। যার ফলে, ভুয়া খবর ব্যাপকভাবে এবং খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। 

২. খবরের উৎস এবং নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করার উপায়

ক. খবরের উৎস যাচাই

কোনো খবরের সত্যতা নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ হলো তার উৎস যাচাই করা। কয়েকটি নির্ভরযোগ্য উৎসের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ 

নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম

যদি খবরটি কোনো জনপ্রিয় এবং স্বীকৃত সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রকাশি হয়, তবে সেটি অনেকাংশে সত্য বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে, এই ধরণের সংবাদ মাধ্যমগুলো কোনো পক্ষপাতিত্বের সাথে যুক্ত কিনা সেটিও বিবেচনা করা উচিত। 

ওয়েবসাইটের URL চেক করা

অনেক সময় দেখা যায় জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর মতো URL তৈরি করে ভুয়া খবরগুলো সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো স্বীকৃত সংবাদ মাধ্যমের URL-এর পরিবর্তিত সংস্করণ (যেমন “.co”, “.in”) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই যেকোনো সংবাদের URL ভালোভাবে যাচাই করা উচিত। 

অফিসিয়াল সোর্স থেকে যাচাই

বিভিন্ন অফিসিয়াল সোর্স যেমন সরকারি সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে তথ্য যাচাই করার মাধ্যমে খুব সহজে ভুয়া খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়। সাধারণত অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলো নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রদান করে। 

খ. লেখকের নাম এবং পরিচয়

ভুয়া খবর বেশিরভাগ সময়ই অস্পষ্ট তথ্য বা মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তৈরি করা হয়। তাই লেখকের পরিচয় যাচাই করতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করুনঃ

লেখকের প্রোফাইল পরীক্ষা

যদি আপনার দেখা খবরটির সাথে লেখকের নাম উল্লেখ থাকে, তবে তার প্রোফাই চেক করুন। যদি লেখকের কোনো নির্ভরযোগ্য পরিচয় প্রমাণিত না হয়, তবে খবরটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে ধরে নেওয়া উচিত। 

লেখকের পূর্ববর্তী কাজ যাচাই

উক্ত লেখক বা রিপোর্টার যদি আগে থেকেই কোনো বিতর্কিত বিষয় বা ভুয়া খবর নিয়ে কাজ করে থাকে, তবে তার সাম্প্রতিক খবরও বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। 

গ. উৎসের নির্ভরযোগ্যতা নির্ধারণ 

মাল্টিপল সোর্স থেকে খবর যাচাই

একটি খবর পড়ার পর অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম থেকে খবরটির সত্যতা যাচাই করুন। একই খবর যদি একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং তা একই বিষয়ে তথ্য প্রদান করে, তবে খবরটি সত্যি বলে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়। 

ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট ব্যবহার

ইন্টারনেট খুঁজে দেখবেন বেশ কিছু ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট আছে যেমন, FactCheck.org, Snopes, BoomLive, AltNews ইত্যাদি। এসব ওয়েবসাইট বিভিন্ন খবরের সত্যতা যাচাই করে। এই সাইটগুলোতে কোনো খবর যাচাই করে আপনি খুব সহজে খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারবেন। 

৩. ছবি ও ভিডিও যাচাই করার পদ্ধতি 

ফেসবুকে শেয়ার করা ছবি ও ভিডিওগুলোও অনেক সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। তাই, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যাচাইয়ের মাধ্যমে এর সত্যতা নির্ধারণ করা সম্ভব। 

ক. রিভার্স ইমেজ সার্চ

রিভার্স ইমেজ সার্চ (Reverse Image Search) একটি কার্যকরী টুল। এটি আপনাকে কোনো ছবির আসল উৎস খুঁজে পেতে সাহায্য করে। 

গুগল ইমেজ সার্চ

গুগল ইমেজ সার্চ ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন ইন্টারনেটে কোনো ছবি কোথায় এবং কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ এর ফলে ছবির আসল উৎস, সময় এবং প্রেক্ষাপট জানা যায়। 

খ. ভিডিওর মেটাডাটা যাচাই

আপনি যদি কোনো ভিডিও কোথায়, কবে, এবং কীভাবে তৈরি হয়েছে জানতে চান, তবে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো ভিডিওর মেটাডাটা (Metadata) যাচাই করা। 

ইন-ফ্রেম ভিডিও বিশ্লেষণ 

কোনো ভিডিওতে যদি এর সত্যতা প্রমাণকারী কোনো বিশেষ চিহ্ন বা ইঙ্গিত থাকে, তবে সেটি ইন-ফ্রেম ভিডিও বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করা যায়। 

গ. ভুয়া ভিডিও শনাক্তকরণ টুলস

InVID

InVID হলো ভিডিও সত্যতা যাচাই করার জন্য ব্যবহৃত একটি ব্রাউজার এক্সটেনশন। এটি ভিডিওর ভিন্ন ভিন্ন ফ্রেম বিশ্লেষণ করে এবং ফ্রেমগুলো কোথায় এবং কোন সময় তৈরি হয়ে তা বুঝতে সাহায্য করে। 

৪. খবরের তথ্যবহুলতা এবং প্রমাণ যাচাই

ক. কনটেক্সট এবং ক্রস রেফারেন্স 

কোনো খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তার প্রেক্ষাপট এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকল তথ্যাদি যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রেক্ষাপট বুঝে নেওয়া

খবরের সময়, প্রসঙ্গ, এবং স্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অনেক সময় খবরের প্রেক্ষাপট ভুলভাবে উপস্থাপন করার কারণেও খবরের সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। 

ক্রস রেফারেন্স করা

কোনো নির্দিষ্ট খবর বা তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে চাইলে তা একাধিক সূত্র থেকে যাচাই করা উচিত। মাল্টিপল সোর্স ব্যবহার করে ক্রস রেফারেন্সিং করে খবরটি ঠিক কতটুকু সত্য তা জানা যায়। 

খ. ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটগুলোর কার্যকারিতা

এই ওয়েবসাইগুলো সাধারণত কোনো খবরকে বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করে এবং নির্ভুল তথ্য প্রদান করে। এসব ওয়েবসাইট তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে খবর যাচাই করে রিপোর্ট প্রদান করে। 

৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবরের প্রতিরোধ 

ক. আত্মসচেতনতা 

ফেবুকে যেকোনো খবর দেখলেই বিশ্বাস করা উচিত না৷ মনে রাখা উচিত যে, পেসবুক এবং অন্য সব সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া সব খবর সত্যি নাও হতে পারে। 

নিজে যাচাই করা

একটি খবর পড়ার পরে সেটি ভুয়া কি না যাচাই করার জন্য নিজে থেকে উদ্যোগী হতে হবে৷ খবরটি শেয়ার করার আগে অবশ্যই তার সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে। 

পরিবার ও বন্ধুদের সতর্ক করা

পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে কেউ কোনো খবর শেয়ার করলে তার সত্যতা যাচাই করা উচিত এবং খবরটি ভুয়া হলে তাকে সতর্ক করা উচিত। এর ফলে ভুয়া খবরের প্রচলন কমবে। 

শেয়ার করার আগে ভেবে নিন

ধরুন, নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে একটি শিরোনাম আপনার চোখে পড়লো। শিরোনামটি ছিলো এমন,”আগামী দুইদিনের মধ্যে বাংলাদেশে বিশাল বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এতে দেশের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণ মানুষকে অতি দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।” আপনি তৎক্ষনাৎ কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়লেন এবং খবরটি শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিলেন। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতজনদের সতর্ক করতে চাইলেন। 

এইরকম পরিস্থিতিতে আপনার উচিত ধৈর্যহারা না হয়ে ঠান্ডা মাথায় কিছু বিয়ষ চিন্তা করা। যেমনঃ এটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি? খবরটি কি আমি কোনো বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে পেয়েছি? অন্য কোনো বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ মাধ্যমে কি একই খবর প্রকাশিত হয়েছে? 

যদি সবগুলো প্রশ্নের নির্ভরযোগ্য ইতিবাচক উত্তর না পান, তবে খবরটি শেয়ার না করাই উত্তম। 

খ. রিপোর্ট এবং ব্লক করা

ফেসবুকে কোনো ভুয়া খবর দেখলে তা রিপোর্ট করা এবং উক্ত খবরের সোর্সটিকে ব্লক করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। 

ভুয়া খবর রিপোর্ট করা

ফেসবুকের কোনো খবর যদি বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা, বা ভুয়া মনে হয়, তাহলে সেটা রিপোর্ট করার সুযোগ রয়েছে। ফেসবুকের এই রিপোর্টিং সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি ফেসবুক টিমকে সেই ভুয়া কন্টেন্টটি সম্পর্কে জানাতে পারেন, ফলে ফেসবুক টিম বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখবে। যদি কন্টেন্টটি ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড-এর বিরুদ্ধে যায়, তাহলে ফেসবুক টিম কন্টেন্টটি রিমুভ করে দিবে। 

ভুয়া সোর্স ব্লক করা

কোনো নির্দিষ্ট সোর্স, প্রোফাইল, বা পেজ থেকে যদি বারবার ভুয়া খবর পোস্ট করে, তাহলে আপনি সেই সোর্সকে ব্লক করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের খবরের সংস্পর্শে আসা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এটি আপনার নিউজফিডে ভুয়া খবরের পরিমাণ কমাবে এবং আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে নিরাপদ রাখবে। 

গ. শিক্ষামূলক প্রচারাভিযান এবং মিডিয়া স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি

ভুয়া খবর প্রতিরোধ করতে শিক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব। 

মিডিয়া স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি 

সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সত্যতা যাচাই করার দক্ষতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধিই মিডিয়া স্বাক্ষরতা নামে পরিচিত। ভুয়া খবরের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে মিডিয়া স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি করা জরুরী। এর মাধ্যমে মানুষ কীভাবে ভুয়া খবর যাচাই ও চিহ্নিত করতে পারে, সে বিষয় শিখতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে এ ধরনের শিক্ষা প্রদান করা যেতে পারে। 

শিক্ষামূলক প্রচারাভিযান 

বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও এবং সরকারি উদ্যোগে ভুয়া খবর প্রতিরোধে প্রচারাভিযান চালানো যেতে পারে। এসব অভিযান মানুষকে একইসাথে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে এবং ভুয়া খবর চেনার কৌশল শিখতেও সাহায্য করবে। 

অনলাইন প্লাটফর্মের দায়বদ্ধতা 

ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোনো ভুয়া খবর চিহ্নিত করার পরে ব্যবহারকারীরা যদি রিপোর্ট করে, তবে প্লাটফর্মগুলোর উচিত উক্ত খবরগুলোকে যাচাই করে দেখা এবং চিহ্নিত করে সেগুলো অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়া। এতে ব্যবহারকারীরা ভুয়া খবর ছড়ানোর বিরুদ্ধে সচেতন হবে এবং মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি কমবে। 

ঘ. প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ 

ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচারাভিযানে সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণ করা উচিত। 

অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচি 

অনলাইনে বিভিন্ন সচেতনতা কার্যক্রম এবং প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করে আপনি নিজেকে এবং আপনার পরিচিতজনদের ভুয়া খবর সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন। এছাড়াও আপনার ব্যক্তিগতভাবে আপনি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে পোস্ট করতে পারেন। 

কমিউনিটি এডুকেশন

কমিউনিটি পর্যায়ের বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা, বা আলোচনার আয়োজন করার মাধ্যমে ভুয়া খবর কী, এর ভয়াবহতা কতখানি, এবং এগুলো চেনার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করতে পারেন। এর ফলে একদম তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষও এ বিষয়ে সচেতন হবে এবং ফেসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কিছু শেয়ার করা আগে তার সত্যতা নিশ্চিত হবে এবং তাদের আচরণগত পরিবর্তন আসবে। 

৬. ভুয়া খবর চেনার টুলস ও রিসোর্স 

ভুয়া খবর চেনার জন্য অনেক টুলস এবং রিসোর্স রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি সত্যি খবর এবং মিথ্যা খবরের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন। 

ব্রাউজার এক্সটেনশন

নির্দিষ্ট কিছু ব্রাউজার এক্সটেনশন রয়েছে যা ব্যবহার করে আপনি খবরের সত্যতা যাচাই করতে পারেন। যেমন, NewsGuard নামে একটি একটি এক্সটেনশন রয়েছে। এটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের নির্ভরযোগ্যতা বিশ্লেষণ করে এবং তাদের নির্ভরযোগ্যতার ভিত্তিতে রেটিং প্রদান করে। 

Fake News Debunker এমনই আরেকটি এক্সটেনশন, যার সাহায্যে আপনি ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভুয়া খবর চিহ্নিত করতে পারবেন। 

বিশ্বস্ত মোবাইল এপ্লিকেশন 

ফ্যাক্ট চেকিং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করে আপনি মোবাইলে ভুয়া খবর শনাক্ত করতে পারেন। যেমন, Factmata এবং Check4Spam এ ধরনের অ্যাপ্লিকেশন এবং এগুলো ভুয়া খবরের সত্যতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই যেকোনো খবরের সত্যতা যাচাই করতে পারেন। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পলিসি এবং কমিউনিটি গাইডলাইনস

ফেসবুক এবং অন্যান্য সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পলিসি এবং কমিউনিটি গাইডলাইন সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ফেসবুকে কোনো কন্টেন্ট পোস্ট বা শেয়ার করার আগে ওই ধরনের কন্টেন্ট পোস্টিং-এর পলিসি সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। যার ফলে আপনি ভুয়া খবর পোস্ট এবং শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন। 

আরো জানুন: ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিং টিপস

উপসংহার

ফেসবুকে ভুয়া খবর যাচাই করা এবং এর ভয়াবহতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া খবর কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না, এটি সামাজিক এবং জাতীয় পর্যায়েও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ভুয়া খবর চেনার জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে এবং নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে সত্যি খবর সংগ্রহ করতে হবে। সঠিক তথ্যের প্রতি গুরুত্ব দিন এবং নিশ্চিত হোন যে, আপনার শেয়ার করা প্রতিটি খবরই নির্ভুল এবং সত্যি। 

পরিশেষে, বর্তমান তথ্যনির্ভর যুগে টিকে থাকার জন্য সচেতনতা এবং তথ্য যাচাইয়ের দক্ষতা অতি প্রয়োজনীয়। উপরে বর্ণিত ফেসবুকে ভুয়া খবর চেনার কৌশলগুলো প্রয়োগ করে আপনি নিজেকে এবং আপনার সমাজকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে পারেন। মিথ্যা খবরের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকুন এবং সঠিক তথ্যের প্রতি দায়িত্বশীল থাকুন। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *