এসইও কি – SEO এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
এসইও (SEO), বর্তমান সময়ে যে কোনো ব্যবসার অনলাইন প্রচার ও প্রসার করার একটি জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য মাধ্যম। এখন ছোট থেকে বড় সকল প্রকার ব্যবসার জন্য অনলাইন উপস্থিতি বা ব্র্যান্ডিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর এই অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিত করার অন্যতম কৌশল এর নামই হচ্ছে এসইও।
আমি মো ফারুক খান, দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এসইও নিয়ে কাজ করছি এবং প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। আজ আমি আপনাদের সাথে এসইও কি এবং এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আমি চেষ্টা করবো এসইও এই ছোট্ট শব্দটির সঠিক অর্থ এবং সংজ্ঞা বুঝানোর জন্য। শুধু তাই না, এসইও এর শুরুটা কিভাবে হয়েছে, সে বিষয়েও কিছুটা কথা বলবো।
চলুন তাহলে শুরু করি।
এসইও কি?
এসইও (SEO) এর পূর্ণরূপ সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন।
এবার আসুন একটু ভেঙ্গে আলোচনা করা যাক-
সার্চ ইঞ্জিন + অপ্টিমাইজেশন
সার্চ ইঞ্জিন কি? সার্চ ইঞ্জিন হল একটি সফ্টওয়্যার প্রোগ্রাম, যা ব্যবহারকারীর প্রশ্নের বা কীওয়ার্ড এর ভিত্তিতে ওয়েবসাইট থেকে সঠিক (সর্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য) উত্তর খুঁজে নিয়ে আসে।
একটু কঠিন শোনালেও আপনি/আমি প্রতিদিনই এই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করি, আমাদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার সঠিক উত্তর এর জন্য। কি এখন নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি।
জী, আপনি সঠিক চিন্তা করেছেন। আমি বলছি গুগল সার্চ ইঞ্জিন এর কথা। যে কিনা বর্তমান সময়ে আমাদের পরম বন্ধু।
তবে শুধু যে গুগলই একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন বিষয়টি কিন্তু এমন নয়, কিন্তু কি আর করার বলুন, বিশ্বব্যাপী সার্চ ইঞ্জিন মার্কেট শেয়ার এর প্রায় ৯২% গুগল নিয়ে বসে আছে। এছাড়াও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সার্চ ইঞ্জিন যেমন: বিং ৩.৩৭%, ইয়ানডেক্স ১.৬৪%, ইয়াহু ১.১%, বাইডু ০.৯৯% এবং ডাকডাকগো ০.৫৩% তো রয়েছে।
আশা করি, সার্চ ইঞ্জিন + অপ্টিমাইজেশন এর সার্চ ইঞ্জিন এই অংশটুকু বুঝতে পড়েছেন।
এখন তাহলে চলে যাই পরবর্তী অংশে: অপ্টিমাইজেশন, শাব্দিক অর্থ চিন্তা করলে এটি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পরিপূর্ণ ভাবে কোনো কিছু করা বুঝায়।
আর এখানে অপ্টিমাইজেশন বলতে বোঝানো হচ্ছে যে একটি ওয়েবসাইট কে এই সার্চ ইঞ্জিনের গাইডলাইন অনুযায়ী প্রস্তুত করা। যেমন: ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি হবে, এর কন্টেন্ট কেমন হবে, ওয়েবসাইটের ছবি গুলি সঠিক সাইজ ও ফরমেটে তৈরি করা, এমন প্রতিটি কাজই এই অপ্টিমাইজেশন এর অন্তর্ভুক্ত।
অর্থাৎ, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এসইও হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া বা কৌশল, যা একটি ওয়েবসাইটকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয় এবং যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র্যাঙ্কিং পজিশন।
আসুন একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।
আমাদের এই গল্পে ২টি চরিত্র আছে, প্রথমজন আয়েশা ও দ্বিতীয়জন আব্দুল্লাহ।
ধরুন, মিস আয়েশা একজন ডেন্টিস্ট। যিনি মোহাম্মদপুর, ঢাকা থাকেন এবং সম্প্রতি তিনি তার পড়াশুনার পর্ব শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেছেন। এই একবিংশ শতাব্দীতে সবাই ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে তার ব্যবসার প্রচার ও প্রসার চান। আর তাই আয়েশাও তার জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন এবং যার মাধ্যমে তিনি তার কাঙ্খিত পেশেন্ট পেতে চাচ্ছেন।
এবার চলুন আমাদের দ্বিতীয় চরিত্রে, আব্দুল্লাহ একজন ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী এবং তিনিও মোহাম্মদপুর, ঢাকা থাকেন। কিছুদিন যাবৎ আব্দুল্লাহর একটি দাঁতে খুব ব্যাথা হচ্ছে। আর তাই সে আজ চিন্তা করলো যে একজন ডেন্টিস্ট এর কাছে যাবে। কিন্তু সে এর আগে এই এলাকাতে কোনো ডেন্টিস্ট এর কাছে যায়নি। তাই সে একটু চিন্তিত হলো, হঠাৎ করেই তার মনে হলো গুগলে সার্চ করলেই তো আমি জানতে পারবো এই এলাকাতে ডেন্টিস্ট কারা আছেন। এবার সে গুগল এ সার্চ করলো: “dentist near me”
আমাদের গল্পের প্রথম চরিত্র আয়েশার একটি ওয়েবসাইট আছে। ঐ ওয়েবসাইটি আব্দুল্লাহ যখন গুগল সার্চ করেছে তখন যদি গুগলের সার্চ রেজাল্ট পেজের প্রথম দিকে থাকে, তাহলে আব্দুল্লাহ সেটি খুব সহজেই পেয়ে যাবে এবং হতে পারে আব্দুল্লাহ আমাদের ডেন্টিস্ট আয়েশার চেম্বারের ঠিকানা নিয়ে সরাসরি চলে যেতে পারে অথবা, মোবাইলে আগে যোগাযোগ করে সিরিয়াল দিয়ে রাখতে পারেন। এবং এভাবে করে আয়েশা তার কাঙ্খিত রোগী পেতে পারেন।
এবার চলে আসি মূল আলোচনায়। আপনি হয়তো ভাবছেন এর সাথে এসইও এর সম্পর্ক কোথায়?
আমি উপরে যে গল্পটি বললাম এটি বর্তমান সময়ের একটি বাস্তব চিত্র। শুধু ডাক্তার নয়, আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এভাবেই অনেক সেবা বা সার্ভিস নিয়ে থাকি, অনেক কিছু অনলাইন থেকে কেনাকাটা করি, অনেক তথ্য জেনে থাকি, আবার অনেক সময় প্রোডাক্টের শুধু দাম যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ভিজিট করে থাকি।
এই যে আব্দুল্লাহ গুগল সার্চ করে আয়েশার ওয়েবসাইটি পেয়ে গেলো এটি কিন্তু এমনি এমনি সার্চ রেজাল্ট পেজে চলে আসেনি। এখানে ওয়েবসাইটি তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে গুগল সার্চ এসএনটিয়ালস (পূর্বের নাম – ওয়েবমাস্টার গাইডলাইনস) কে সঠিক ভাবে অনুসরণ করার কারনেই আজ আয়েশার ওয়েবসাইটি গুগল এ র্যাঙ্ক করেছে। আর এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার নামই হচ্ছে – সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এসইও।
তবে এখানে একটি বিষয় আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এসইও এমন কোনো জাদুর নাম না, যা আজ শুরু করলেই আগামীকাল আপনার ওয়েবসাইটে অনেক ভিজিটর চলে আসবে, আপনার ব্যবসা ভালো হতে শুরু করবে।
এসইও হচ্ছে কিছু কৌশল ও ধারাবাহিক কাজ, যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে ভালো পজিশন লাভ করতে পারে। তবে ধারাবাহিক কাজ এর সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। কখনো কখনো এই সময় ১-২ বছরও হতে পারে আবার কখনো বা ৩-৬ মাসও। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এসইও একটি চলমান প্রক্রিয়া, আপনার ওয়েবসাইট এর শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত যার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশে এখনও এর সঠিক গুরুত্ব অনেকেই বুঝতে পারেনি।
সার সংক্ষেপ: সার্চ ইঞ্জিনে একটি ওয়েবসাইটের উপস্থিতি এবং র্যাঙ্কিং নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ার নামই এসইও (SEO)।
এসইও এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
এসইও এর জন্ম নিয়ে কথা বলতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে সার্চ ইঞ্জিন এর ইতিহাস। কেননা, সার্চ ইঞ্জিন না তৈরি হলে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনও প্রয়োজন হতো না।
৯০ এর দশককে সার্চ ইঞ্জিনের জন্ম কাল ধরা হয়। কারণ, এই সময়ের মধ্যেই অনেক সার্চ ইঞ্জিন এর জন্ম, যার মধ্যে গুগল অন্যতম।
আর্চিকে (মূল নাম “আর্কাইভস”) প্রথম সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা ১৯৯০ সালে কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র অ্যালান এমটাজ তৈরি করেছিলেন।
কিন্তু, WebCrawler ছিল প্রথম ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন, যা সম্পূর্ণ টেক্সট সার্চ প্রদান করে। ১৯৯৪ সালে, ব্রায়ান পিঙ্কারটন, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র, ওয়েবক্রলার তৈরি করেছিলেন, যা ব্যবহারকারীদের একটি ওয়েবপেজ থেকে যেকোনো শব্দ সার্চ করতে সহায়তা করতো।
“SEO” (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান) শব্দটি প্রথম ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি ব্যবহার শুরু হয়, যদিও সঠিক তারিখটি অনিশ্চিত। যখন ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং AltaVista, WebCrawler এবং পরবর্তীতে Google এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলি আরও জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইটের মালিকরাও তাদের ওয়েবসাইট গুলিকে সার্চ রেজাল্ট পেজে ভাল র্যাঙ্ক করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন।
এসইও এনালিস্ট ড্যানি সুলিভানের মতে, “সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান” শব্দটি সম্ভবত ১৯৯৭ সালে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ব্রুস ক্লে এই এসইও শব্দটিকে জনপ্রিয় করার প্রথম সারির ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম।
এরপর ১৯৯৮ সালে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের যাত্রা শুরু হলে, এসইও এই শব্দটির জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে এবং ১২ই ডিসেম্বর, ২০০৩ সালে, এসইও পেজটি প্রথমবারের মতো উইকিপিডিয়ায় স্থান পায়।
শেষ কথা
আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এতদিনে বুঝতে পড়েছি যে, এসইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বা স্কীল। যা অনলাইন জগতে থাকা প্রতিটি ওয়েবসাইট (বিশেষ করে লোকাল সার্ভিস ও ইকমার্স) এর জন্য অপরিহার্য।
তাই আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট এর মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই এসইও জ্ঞান থাকা উচিত। আমি আপনাকে এসইও তে মাস্টার হতে বলছি না, এটা আপনার কাজও না কিন্তু আপনার ব্যবসা বা ব্যক্তিগত প্রচার ও প্রসারের জন্য আপনার এর গুরুত্বটা বোঝা দরকার। আর এর জন্য আপনার এসইও এর বেসিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। আমি চেষ্টা করবো আমার এই ব্লগের মাধ্যমে আপনাদের এসইও সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব সাধারণ জ্ঞানটুকু দেয়ার জন্য। আজ তার প্রথম চেষ্টা, এসইও কি? এর টপিক দিয়ে শুরু করলাম।
লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। আর আপনার যদি এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানালে আমি চেষ্টা করবো সঠিক উত্তরটি দেয়ার।
সবাই ভালো থাকবেন, খুব শীঘ্রই ফিরে আসছি অন্য কোনো নতুন টপিক নিয়ে, ইনশাআল্লাহ।